সায়েদুল ইসলামঃ ঢাকার হাজারীবাগের চামড়া কারখানাগুলোকে সাভারের শিল্প নগরীতে সরাতে ব্যর্থ হয়ে শুক্রবার থেকে সেখানে কাঁচা চামড়া প্রবেশ বন্ধ করে দিয়েছে সরকার।
হাজারীবাগের প্রবেশ পথগুলোয় পুলিশী প্রহরা বসানো হয়েছে, যাতে কাঁচা চামড়া নিয়ে কেউ প্রবেশ করতে না পারে।
সরকার বলছে, কারখানাগুলোকে সাভারে স্থানান্তরে বাধ্য করতেই এই ব্যবস্থা।
তবে কারখানা সরাতে আরো সময় চাইছেন মালিকরা।
ধানমণ্ডি থেকে ঝিকাতলার রাস্তা দিয়ে হাজারীবাগ প্রবেশের মুখেই পুলিশের প্রহরা দেখতে পান বিবিসির সংবাদদাতা।
তারা অন্য কোন গাড়ি না আটকালেও চামড়া থাকতে পারে, এমন ভ্যান বা গাড়িগুলো তল্লাশি করে দেখছেন।
চামড়া বাহী কোন গাড়ি পাওয়া গেলে সেগুলো উল্টোপথে আবার ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে।
হাজারীবাগ থানার কর্মকর্তা মীর আলীমু্জ্জামান বলছেন, হাজারীবাগের সবগুলো প্রবেশ পথেই তাদের এই পাহারা রয়েছে।
মি. আলীমুজ্জামান বলছেন, “আমাদের উপর নির্দেশ রয়েছে, ১ এপ্রিল থেকে কাচা চামড়া নিয়ে কোন গাড়ি ভেতরে ঢুকতে পারবে না। বাইরে যেতে পারবে, কিন্তু ভেতরে না। এজন হাজারীবাগে প্রবেশের সবগুলো পথেই আমাদের ফোর্স রয়েছে। তারা কাচা চামড়া নিয়ে কোন গাড়ি ভেতরে ঢুকতে দেবে না।‘’
তিনি বলছেন, সকালে এরকম দুইটি গাড়ি আসার চেষ্টা করছিল। কিন্তু তাদের ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত তারা এই পাহারা অব্যাহত রাখবেন।
রাস্তাগুলো দিনের প্রথমভাগে বেশ ব্যস্ত থাকলেও, শুক্রবার সকালে ছিল অনেকটাই ফাঁকা। বিভিন্ন গলিতে অনেক শ্রমিককে দেখা গেল অলস বসে রয়েছেন। খোজ নিয়ে জানা গেল, বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানই গত কয়েকদিন ধরে প্রয়োজনীয় কাঁচা চামড়া সংগ্রহ করে রেখেছে। কয়েকটি কারখানা বন্ধ, কিছু কারখানা আগে থেকে সংগ্রহ করে রাখা কাঁচা চামড়া দিয়ে কাজ করছে।
এখানকার একটি কারখানায় গিয়ে দেখা গেল, বেশ কয়েকজন শ্রমিক কাচা চামড়া প্রক্রিয়াজাত করণের কাজ করছেন। কারখানার একপাশে আধা প্রস্তুত চামড়া স্তূপ করে রাখা হয়েছে।
কারখানাটির ব্যবস্থাপক নজরুল ইসলাম জানালেন, তাদের কাছে ২/৩ দিনের কাঁচা চামড়া রয়েছে। এরপর নতুন সরবরাহ না এলে কারখানার কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাবে।
সাভারেও তাদের কারখানা তৈরির কাজ চলছে বলে তিনি জানান। তবে সেটি শেষ হতে আরো কয়েকমাস সময় লাগবে।
২০০১ সালে হাইকোর্টের একটি নির্দেশের পর ঢাকার হাজারীবাগ থেকে চামড়া কারখানাগুলো সরানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়। সাভারে একটি চামড়া শিল্প নগরী তৈরি করে প্লট বরাদ্দ এবং অর্থ সহায়তা দেয়ার পরও, কারাখানা সরাতে দফায় দফায় সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত একটি কারখানাকেও সাভারে সরানো যায়নি। বাংলাদেশ ট্যানারিস এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত উল্লাহ অবশ্য বলছেন, তারা আশা করছেন, আগামী কয়েকমাসের মধ্যেই সেখানে অনেকগুলো কারখানা চলে যাবে।
সাখাওয়াত উল্লাহ বলছেন, আমাদের ট্যানারি কারখানাগুলো সাভারে পুরোদমে কাজ করছে। আমরা আশা করছি, আগামী তিনমাসের মধ্যে সেখানে ৫০/৬০টি কারখানা চালু হয়ে যাবে। বাকি কারখানাগুলোও পর্যায়ক্রমে চলে যাবে।
কিন্তু কারখানাগুলো সরাতে এতো সময় লাগছে কেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, সাভারের যে স্থানে কারখানা তৈরি করা হচ্ছে, সেটি ডোবা জায়গা ছিল বলে পাইলিং ও অন্যান্য কাজে সময় লাগছে। তারা চাইছেন, যাতে ভালো আর নিরাপদভাবে কারখানাগুলো তৈরি করা হয়। সব ট্যানারি মালিক সেখানে এখন কাজ করছেন।
কারখানা মালিকদের দাবি, এখনি কাঁচা চামড়া সরবরাহ বন্ধের এই সিদ্ধান্তে রপ্তানিমুখী এই শিল্পটি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই ট্যানারি মালিকরা কয়েকদিনের মধ্যেই সরকারের সঙ্গে বৈঠক করে কারখানা স্থানান্তরে আরো কিছুটা সময় দেয়ার জন্য অনুরোধ করবেন বলে জানা গেছে।